আরমানিটোলায় হাজী মুসা ম্যানশনের একটি ভবনে আগুন লেগেছে। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পড়েছে। এলাকাবাসীর ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যরিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসের। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পরিবারের সদস্য। সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগ করে মেয়র হয়েছেন। তার নিশ্চয়ই আশা ছিল তিনি তার দায়িত্ব ভালভাবেই পালন করতে পারবেন। অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর তিনি বলেন, চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডের পর থেকে আমরা কিন্তু সম্পূর্ণভাবে ট্রেড লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছি। একারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা অটুট থাকি। তিনি বলেন, আমি অবাক হই, সিটি কর্পোরেশন থেকে কোন বানিজ্যিক অনুমতি ছাড়াই কি ভাবে তারা এই রাসায়নিক দ্রব্যাদি আমদানি করে, কি ভাবে গুদামজাত করে এবং কিভাবে ব্যবসা করে? খুবই অবাক কান্ড। কর্তৃপক্ষ যতক্ষণ পর্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত সমস্যা রয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, শিল্পমন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প নিয়েছে কেরাণীগঞ্জে, এসব গোদামগুলোর স্থানান্তর করা হবে। এ নিয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সভা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আমরা পালন করেছি। অবৈধ রাসায়নিক গোদামের তালিকা করার কথা বলা হয়েছিল, আমরা তা করেছি কিন্তু আজ পর্যন্ত তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করিনি।

মাননীয় মেয়র তার ক্ষমতায় থাকা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন লাইসেন্স না দিয়ে। কিন্তু কর্পোরেশন ব্যবসার লাইসেন্স না দিলেও অন্য উপায়ে আমদানি করা যায়, গুদামজাত করা যায়, ব্যবসা করা যায় এটা প্রমাণিত হলো। এজন্য কর্তৃপক্ষ মানে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগকে তিনি দায়ী করেছেন। আমদানির অনুমতি দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অনুমিতর এই ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স আছে কি নেই তা আমলে নেয়া হয়নি। কিন্তু গোদাম জাতের অনুমতি দিল কে? ব্যবসার অনুমতি দিল কে? তিনি এটাও জানিয়েছেন অবৈধ রাসায়নিক গোদামের একটি তালিকা তিনি পাঠিয়েছিলেন। এতে কি মুসা ম্যানশনের অবৈধ গোদামটির নাম যায়নি? মেয়র ফজলে নুর তাপসের আন্তরিকতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই। কর্পোরেশন এই গুদামটির তালিকা নিশ্চয়ই পাঠিয়েছিল, সমস্য ভিন্ন জায়গায়। মেয়রের দায়িত্ব অনেক, ক্ষমতা খুবই কম। অবৈধ গুদামের তালিকা পাঠাতে হবে কেন? তিনিতো তার এলাকার সব রাসায়নিকের গোদামগুলো হঠিয়ে এলাকাকে নিরাপদ রাখতে পারতেন। তিনি পারেননি কারণ তার সে ক্ষমতা নেই। গোদামগুলো তুলতে গেলে তিনি বিপাকে পড়তেন কারণ রাসায়নিকের আমদানির লাইসেন্স নিশ্চয়ই ছিল, তুলতে গেলে পুলিশের সাহায্য চাইতে হতো। বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্স থাকলে পুলিশ গোদাম উচ্ছেদ করতো কিনা সেটাও প্রশ্নের ব্যাপার। এলাকার নিরাপত্তা দান মেয়রের হাতে থাকার কথা বলা হলেও পুলিশ তার নিয়ন্ত্রনে নেই, ভবন ঠিক মতো বানানো হচ্ছে কিনা, ভবন ভেঙ্গে পড়বে কিনা, দক্ষিণ সিটিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা হচ্ছে কিনা, তার এলাকার কোথাও গ্যাস লাইন যাবে কিনা, বাতি ঠিকমতো জ্বলবে কিনা, করোনা চিকিৎসা হবে কিনা, মিল ফ্যাক্টরী কোথায় হবে, নিয়ম মেনে হচ্ছে কিনা, নালার পানি কোথায় পড়বে, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে কিনা, যানজট, এলাকার পানি এর কোন কিছুর উপর মেয়রের কোন হাত নেই। এর প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় আছে। তারাই সব করবেন। মেয়র বা সিটি কর্পোরশেনের মতামত নেয়া কারোরই জন্য যে প্রয়োজনীয় বা বাধ্যতামুলক নয় আলোচিত রাসায়নিক গুদামই তার প্রমাণ দেয়। অথচ এলাকার জনগণ সব কাজের জন্যই মেয়রকে দায়ী করেন। কর্পোরেশন ম্যানুয়েলে মেয়রদের প্রচুর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কিন্তু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে খুবই কম। এই ক্ষমতা সমস্যার সমাধান করা ছাড়া মেয়ররা কেবল ক্ষুব্ধই হতে পারবেন, কাজ তেমন কিছুই করতে পারবেন না। অথচ এমন হওয়ার কথা নয়। শেখ ফজলে নুর তাপস একজন ব্যারিস্টার। তিনি নিশ্চয়ই জানেন বঙ্গবন্ধুর সময়ে রচিত ৭২ সংবিধানে মেয়রসহ সকল পর্যায়ের স্থানীয় সরকারগুলোকে প্রচুর ক্ষমতা দেয়ার কথা বলেছিল। এখনও সংবিধানের সেই ৫৯ ও ৬০ ধারাগুলো আয়োতায় আছে। কোন সরকার এগুলোর উপর কাচি চালায়নি। আবার কোন সরকারের আমলে আমাদের জাতীয় সংসদ এই ধারাগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করে স্থানীয় সরকার আইন প্রণয়ন করেনি। মানে দাড়ায় সব সরকার এর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে কিন্তু অনুসরণ করেনি। অনুচ্ছেদগুলো দেখা যাক।

৫৯ অনুচ্ছেদে – (১) আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।

(২) এই সংবিধান ও অন্য কোন আইন-সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা যেরূপ নির্দিষ্ট করিবেন, এই অনুচ্ছেদের (১) দফায় উল্লিখিত অনুরূপ প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান যথাপোযুক্ত প্রশাসনিক একাংশের মধ্যে সেইরূপ দায়িত্ব পালন করিবেন এবং অনুরূপ আইনে নিম্নলিখিত বিষয় সংক্রান্ত দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত হইতে পারিবে।

(ক) প্রশাসন ও সরকারী কর্মচারীদের কার্য;

(খ) জনশৃঙ্খলা রক্ষা;

(গ) জনসাধারণের কার্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন

৬০ অনুচ্ছেদঃ এই সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের বিধানাবলীকে পূর্ণ কার্যকরতা দানের উদ্দেশ্যে সংসদ আইনের দ্বারা উক্ত অনুচ্ছেদে উল্লিখিত স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্থানীয় প্রয়োজনে কর আরোপ করিবার ক্ষমতাসহ বাজেট প্রস্তুতকরণ ও নিজস্ব তহবিল রক্ষণাবেক্ষনের ক্ষমতা প্রদান করিবেন।

শেখ ফজলে নুর তাপস মেয়র হয়ে তার সীমাবদ্ধতা ইতোমধ্যে টের পেয়েছেন। এই সীমাবদ্ধতার কথা কিছু বলেছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিকট সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মতোই তিনি চেষ্টা শুরু করতে পারেন স্বশাসিত স্থানীয় সরকারের পক্ষে জনমত গঠনের উদ্যোগ নিতে। উদ্যোগ ঢাকা থেকেই নিতে হবে। তাহলেই তা সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়বে। উপজেলা চেয়ারম্যানরা একটি উদ্যোগ নিয়ে থেমে গেছেন। স্বশাসিত স্থানীয় সরকার গঠনের পথে বাধা অনেক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ইচ্ছা করলে এই বাধা ডিঙ্গাতে পারবেন না। এই বাধা ডিঙ্গাতে পারে কেবল এবং কেবল মাত্র সংগঠিত জনগণ। জনগণ সংগঠিত হয়ে দাবি তুললে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এর পক্ষে আইন পাশের উদ্যোগ নিবেন বলে অনেকের বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রীর গণমুখী চরিত্র সে ইঙ্গিতই দেয়।