চট্টগ্রাম নগরের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে পর পর সাতবার নির্বাচিত কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২০২১ সালের ১৮ মার্চ) ভোর সোয়া পাঁচটায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলেসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

চসিক নির্বাচনের আগে সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুর মস্তিষ্কে অপারেশন করা হয়েছিল। মৃত্যুর বেশ কয়েকদিন আগে থেকে মেরুণ্ডের ব্যাথাসহ শারীরিক নানা জটিলতার কারণে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। একই দিন বেলা দুইটায় মরদেহ চকবাজার জয়নগরের বাড়িতে আনা হয়। এশার নামাজের পর প্যারেড কর্নারে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান চৌধুরী প্রমুখ অংশ নেন। এরপর হজরত মোল্লা মিছকিন শাহের (র.) দরগাহস্থ কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, চসিকের সাবেক প্রশাসক ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ অনেকে।

মিন্টুর জানাজা হয় রাত নয়টায়। অন্ধকার মাঠে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ হাজারের মতো। অনেকের মতে দিনের বেলায় জানাজা হলে লাখ খানেকের মতো লোক হতো। এটা তার সুউচ্চ জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়। প্রায় ৩৫ বছর যাবত তিনি এলাকার লোকের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তার ঘনিষ্টজনেরা জানান কোন নির্বাচনে গোলাম হায়দার মিন্টুর কোন অর্থ খরচ হতো না। খরচের সামর্থ তার ছিল না। এলাকার জনগণ নিজেরাই টাকা তুলে মিন্টুর নির্বাচন করতেন এবং তাকে জিতাতেন।

মিন্টুর এই দীর্ঘকালিন জনপ্রিয়তার কারণ কি? এলাকার জনগণের বিশেষ কোন উপকার করার ক্ষমতা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নেই। মিন্টুরও সে ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু কোন যাদুবলে মিন্টু তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছিলেন? তার ঘনিষ্টজনদের মতে মরহুম মিন্টু জণগণের যে কোন ডাকে সাড়া দিতেন। তিনি উপকার করতে না পারলেও সবার সব কথা ধৈর্যসহকারে মনযোগ দিয়ে শুনতেন। সমস্যার সমাধান না করতে পারলে সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে বলতেন। তাকে কেউ কোনদিন উচ্চস্বরে কথা বলতে বা রাগ করতে দেখেন নি। সবচাইতে বড় কথা হলো তিনি দুর্নীতিমুক্ত ছিলেন এবং এলাকার মানুষজন তা জানতেন। বাংলাদেশের এই যুগে এসে নিজের টাকা খরচ না করেও যে নির্বাচিত হওয়া যায়, আজীবন জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যায় সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু তা প্রমাণ করে গেছেন। রাজনীতিবিদরা জনাব মিন্টুকে আদর্শ মেনে কাজ করতে পারেন।

কাউন্সিলর গোলাম হায়দার মিন্টুর মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, মহসচিব ফাহিম উদ্দিন আহমদ এবং গণঅধিকার চর্চা কেন্দ্র-চট্টগ্রাম এর আহ্বায়ক নুরুল হুদা মাষ্টার, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান, যুব শাখার আহ্বায়ক জয়নুদ্দীন জয়, সদস্য সচিব বেলাল হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।